হাতে ছিল ২২টি ছবি। কিন্তু সেগুলো অসম্পূর্ণ রেখেই ১৯৮৫ সালের ২২ জুলাই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী মহুয়া রায় চৌধুরী। ৮০ শতাংশ ঝলসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হলেও সেই ঘটনা নিয়ে এখনো রহস্য থেকেই গিয়েছে। ৩৯ বছর পরেও মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যু আত্মহত্যা, খুন নাকি নিছক দুর্ঘটনা? উত্তর মেলেনি।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল মহুয়া রায়চৌধুরীর। শোনা গিয়েছিল, ছেলে তমালের দুধ গরম করতে গিয়ে মদের নেশায় চুর ছিলেন মহুয়া। এর জেরেই ঘটে বিপত্তি। তবে বাবার বাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে মুক্তি পেতে প্রেম করে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সেখানেও সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। হানিমুন পর্ব কাটতে না কাটতেই স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ওঠে জীবন।
তিলক চক্রবর্তীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মহুয়া। স্বামীর হাতে রোজ মার খেতেন, মারের দাগ মেকআপে ঢেকে চলত অভিনয়। সংসারের নিত্য-অশান্তির মাঝেই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসতে থাকে মহুয়ার বেপরোয়া জীবনযাপনের কথা। রোজের জীবনের অবসাদ ঢাকতে মদ্যপান , পরকীয়া হয়ে উঠেছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
মাত্র ৮ বছর বয়সেই মাকে হারিয়েছিল মহুয়া পুত্র। ছেলেকে বড় করেছেন মহুয়ার স্বামী তিলক। যদিও তিনিও এখন মারা গিয়েছেন। শহরের নামী স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন তমাল। পুনের একটি অটো মোবাইল ফার্মে চাকরি করেছিলেন তমাল। শহর ব্যান্ডের মিউজিক অ্যারেঞ্জার হিসাবে কাজ করেছেন তমাল। ২০২২ সালে বাংলা সিনেমা ‘আকরিক’-এর মিউজিকের দায়িত্বভারও সামলেছেন তমাল।
শোনা যায়, অনেক ছবিতে তাঁকে প্রায় বিনা পারিশ্রমিকেও নাকি কাজ করতে হয়েছে। অভিনয় ভালবাসতেন বলে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে তাঁকে কাজ করিয়ে নিতেন। পেশাজীবনের এই না-পাওয়ার যন্ত্রণা আরও তীব্র ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েনে অকালেই শেষ হয়েছিল সম্ভাবনাময় জীবন।
ইন্ডাস্ট্রি বলে, তৎকালীন নায়িকাদের মধ্যে তিনি বেপরোয়া, একরোখা, ঠোঁটকাটা, জেদি এবং দুঃসাহসী। তার ছাপ পড়েছিল ব্যক্তিজীবনেও। মহুয়া বিব্রত ছিলেন নিজের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে।বাবা বিয়েতে বাধা দেওয়ায় অভিমানী মেয়ে গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিলেন। যত বার তিলকের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, তত বার তিনি হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে গিয়েছেন। প্রমাণের অভাবে পুলিশি তদন্ত এক সময় থেমে গিয়েছে। ৩৯ বছর পরেও তাই মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যু রহস্যাবৃত।