নিজের দক্ষতায় ফুটপাথ থেকে উঠে এসেছেন রাজপ্রাসাদে! জন্মদিনে প্রকাশ্যে মিঠুন চক্রবর্তীর অজানা কাহিনী

Published on:

নিজের দক্ষতায় ফুটপাথ থেকে উঠে এসেছেন রাজপ্রাসাদে! জন্মদিনে প্রকাশ্যে মিঠুন চক্রবর্তীর অজানা কাহিনী

আজ ৭৫ বছরে পা দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে জন্ম হয় মিঠুনের। এরপর সেখানেই বেড়ে ওঠা।বরিশাল জিলা স্কুলে পড়াশোনা করেন।তারপর আসেন কলকাতায়। স্কটিশ চার্চ কলেজে গ্র্যাজুয়েশন করেন। হঠাৎ করেই সিনে দুনিয়ায় ঢুকে পড়েন। এরপর কেটে গিয়েছে ৫০ টি বছর। করে ফেলেছেন প্রায় ৩৭০টি ছবি।

নিজের দক্ষতায় ফুটপাথ থেকে আজ রাজপ্রাসাদে উঠে এসেছেন গৌরাঙ্গ চক্রবর্ত্তী ওরফে মিঠুন চক্রবর্তী। তাঁর অভিনয় নিয়ে কেউ কোনও দিন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কিন্তু একসময় টাকা উপার্জনের জন্য তাঁকেও করতে হয়েছে এই কাজ। যা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তাঁর বড় ছেলে মহাক্ষয় চক্রবর্তী ওরফে মিমো। আজ মহাগুরুর জন্মদিনে রইল কিছু অজানা কাহিনী।

   
 ⁠

স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন মিঠুন চক্রবর্তী। এরপর তিনি পড়াশোনা করতে চলে যান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ায়। কিন্তু হঠাৎ করেই সংসারের হাল ধরতে, আন্দোলন ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয় মিঠুনকে। সেসময়ে তাঁরও জীবনের ঝুঁকি ছিল। ধীরে ধীরে মিঠুনের জীবন মোড় নেয় অন্যদিকে।

  
 ⁠

এরপর ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের পরিচালনায় মৃগয়া ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। জিতে নেন সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার। এরপর মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ না পেয়ে কার্যত হারিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরপরে, তাঁকে খ্যাতির আলোয় নিয়ে এল ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিটি। শুধু অভিনয় নয়, মিঠুন পরিচিত হলেন এক দুর্দান্ত নৃত্যশিল্পী হিসেবেও।

২০ সি মধু সেন গার্ডেন লেনের গরীব ঘরের ছেলেটি মিঠুন চক্রবর্তী৷ আজ সকলের প্রিয় মহাগুরু৷ সম্প্রতি তিনি জানান, “নাচ করে আমি আমার প্রথম অর্জন শুরু করেছি। তার কারণ আমার গায়ের রঙের জন্য কেউ আমাকে কাজ দেয়নি একটা সময়। সবাই গালিগালাজ দিয়েছে।আমার জীবনের অর্জন আমি করেছি নাচ দিয়ে। আর তারপর সেই নাচ আমাকে পৃথিবী-বিখ্যাত করেছে”।

মৃণাল সেনের পরিচালনায় ১৯৭৬ ‘মৃগয়া’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। কিন্তু বলিউডে মাটি পেতে সময় লাগছিল তাঁর।এই সিনেমায় অসাধারণ অভিনয় প্রতিভার জন্য তিনি ন্যশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার সম্মান পান। এরপর দো আনজানে ও ফুল খিলে হ্যায় গুলশান গুলশান-এ অভিনয় করেন। মুঝে ইন্সাফ চাহিয়ে, ঘর এক মন্দির, প্যার ঝুঠা নেহি, স্বর্গ সে সুন্দর এবং প্যায়ার কা মন্দির সিনেমায় অভিনয় করেন।

১৯৮২ সালে ডিস্কো ড্যন্সার সিনেমায় অভিনয় করে তিনি পুনরায় প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বাপ্পি লাহিড়ীর গানে সেদিন নেচেছিলেন ছবিতে থাকা এই খুদে৷ তিনি শুধু বলিউড নয় বাংলা, ওড়িয়া, তামিল, ভোজপুরি, পাঞ্জাবি, কন্নর ভাষায় সিনেমা করেছেন।

সাংসারিক জীবনেও তিনি অত্যন্ত সুবোধ বালক। ব্যক্তিগত জীবনে, অভিনেত্রী যোগীতা বালির সঙ্গে বিয়ে হয় মিঠুনের। তাঁর দুই সন্তানও রয়েছে। শোনা যায়, একসময় শ্রীদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মিঠুনের। সেই সম্পর্ক এগিয়েছিল এতটাই যে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে একথাও ভাসে যে গোপনে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শ্রীদেবী যখন বুঝতে পারেন মিঠুন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চান না, সম্পর্ক থেকে সরে আসেন শ্রীদেবী।

২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে পার্লামেন্টের সদস্য হন। ২৬ শে ডিসেম্বর ২০১৬ সালে তিনি ওই পদে ইস্তফা দেন। তিনি বেশ কিছু নামী বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হয়েছিলেন।

২০০০-এর শুরুতে খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায় মিঠুন চক্রবর্তীর কেরিয়ার। অভিনয় করেন বেশ কিছু বি-গ্রেড ছবিতে। এই প্রসঙ্গে মিমো জানান, “পয়সার জন্য করতে বাধ্য হয়েছে বাবা। তবে এমনটা তো নয় ওই সব প্রযোজকরা ক্ষতির মুখ দেখছিলেন। ৭০ লক্ষ খরচ করলে তাঁরা পরিবর্তে এক কোটি পাচ্ছিল। এখনও তো বাবা ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এ কাজ করছেন। উনি যা করেন, তা সব সময় আমাদের জন্যই করেন। আমার খুব গর্ব হচ্ছে বলতে, তাঁর প্রথম ও শেষ চিন্তা শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র পরিবারকে ঘিরেই”।